তহিদুল ইসলাম রাসেল, চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধানঃ-
আধুনিকায়নের যুগে হাতে একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল অথবা ট্যাব থাকলে ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করেই পড়তে পারে নিজেদের পছন্দের বই। তবে মোবাইলে বিভিন্ন রকম অ্যাপ অথবা যোগাযোগ মাধ্যম থাকায় সহজেই ব্যাঘাত ঘটাতে পারে মনোযোগের। সেই ক্ষেত্রে একটু পুরোনো হলেও বিভিন্ন জ্ঞান-অর্জনের জন্য ‘বই উৎসব বা মেলার গুরুত্ব এখনও অনেকখানি।
কথায় আছে— বন্দুকের গুলি একজন মানুষকে হতাহত করতে পারলেও একটি কলমের জোড়েই হতাহত করতে পারে বহু মানুষদের। তবে এই হতাহতের দিকটি শারীরিক নয়; এটি মানসিক। চিন্তা ও চেতনাকে পরিবর্তন করার শক্তি একটি বইয়ের মাঝে বিদ্যমান। আর সেই বইয়ের পাণ্ডুলিপি সৃষ্টি হয় একটি কলমের জোড়ে। এই সমাজে বই ও কলমের অনবদ্য ভূমিকা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। বই পড়ুয়া মানুষদের কাছে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা এই আধুনিক ডিজিটাল যুগে এখনো বিদ্যমান। চট্টগ্রাম নগরের জামাল খান মোড়েই দেখা মিলেছে ‘বইয়ের প্রতি ভালোবাসার’ এমন চিত্রের।
আজ শনিবার (১১ মার্চ) জামাল খান মোড়ে জেলা পরিষদের পৃষ্ঠপোষকতায় ও ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাস সুমনের সহযোগিতায় আয়োজন হয়েছে একদিন ব্যাপী ‘বই বিনিময় উৎসব- ২০২২’। গত বছরের ন্যায় এই বছরও একইদিনে বই বিনিময় উৎসবের আয়োজন করেছে ‘ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ’। আর এ উৎসবের মধ্য দিয়েই বইপ্রেমিরা ভাগ করে নিয়েছে নিজেদের কাছে জমে থাকা বিভিন্ন বই।
যেখানে গত বছর মোট বই বিনিময় হয়েছিল ১০ হাজার ২৫টি; সেখানে এই বছর বইয়ের বিনিময় হয়েছে ২০ হাজার ৭৪টি। এবার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্টল বসেছে ১৩টি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ধর্মতত্ত্ব, কথা সাহিত্যিক, দর্শন, জাফর ইকবাল সমগ্র, শিশুতোষ, কবিতা, ইতিহাস, রাজনীতি, একাডেমিক ও ট্যাবলয়েড। এছাড়া মোট ১৩টি স্টলের মধ্যে ‘কথা সাহিত্যিক’ স্টলেই বিনিময় হয়েছে ৮ হাজারটি বই।
সারাদিন ব্যাপী এই উৎসবে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান, কবি ও সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী ও ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাস সুমন। তাছাড়া এই উৎসবে বই বিনিময়ের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেছেন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ নানা বয়সের সাধারণ মানুষ।
উৎসবের নিয়ম অনুসারে যে কেউ পাঁচটি বই জমা দিয়ে নিতে পারবে ৫টি বই। তবে বেঁধে দেওয়া আছে নিয়ম। যে ক্যাটাগরি বই দিবে; ঠিক সেই ক্যাটাগরিরই বই নিতে পারবে বইপ্রেমিরা। তবে ছাড় দেওয়া আছে একাডেমি সম্পর্কিত বইয়ের ক্ষেত্রে। নেই কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা। দিতে ও নিতে পারবে অসংখ্য বই। এই বই বিনিময় উৎসব ব্যাপক হারে জনপ্রিয়তা পেয়েছে সর্ব সাধারণ মানুষের কাছে। আধুনিক মোবাইলের যুগে এমন উৎসব প্রশংসনীয়। বাড়তে পারে বই পড়ার আগ্রহ। আর, যার কাছে নতুন বই কেনার সামর্থ্য নেই; সেও তার পুরোনো বই দিয়ে নিতে পারছে পছন্দ মত বই।
এ ব্যাপারে নগরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাস সুমন বলেন, ‘এই করোনাকালীন সময় নতুন প্রজন্ম গৃহবন্দি হয়ে গিয়েছিল এবং স্কুল-কলেজও বন্ধ ছিল। অনেকে আবার ভিডিও গেমে আশক্ত হয়ে গিয়েছিল। অনেকে আবার আত্মহত্যার মতো পদক্ষেপও নিয়েছিল। এই সময় যদি বই নিয়ে তারা ব্যস্ত থাকত; তাহলে তাদের জ্ঞানের পরিধি এবং বইয়ের প্রতি ভালোবাসা বাড়তো। প্রজন্মের কাছে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা জাগাতেই আমাদের এই আয়োজন। প্রতি বছরেই আয়োজন করা হোক এমন বই বিনিময় উৎসব। বাড়তে থাকুক জ্ঞান; সুন্দর হোক নতুন প্রজন্মের চিন্তাধারা।
Leave a Reply