তহিদুল ইসলাম রাসেল, চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধানঃ-
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ বা তার অঙ্গসংগঠন ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিতে ভারসাম্য থাকতো। সভাপতি এক বলয় থেকে করা হলে সাধারণ সম্পাদক পদ পেতেন আরেক বলয়ের নেতা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পুরনো রীতি থেকে বেরিয়ে সেই ভারসাম্য আর রাখা হচ্ছে না।
এর আগে চট্টগ্রাম মহানগরে আওয়ামী লীগের যেসব অঙ্গসংগঠন ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি হয়েছে, তার সবকটিতেই কেন্দ্রের ‘সুনজর’ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন আ জ ম নাছিরের অনুসারীরা। সর্বশেষ স্বেচ্ছাসেবক লীগের চট্টগ্রাম নগর কমিটির বেলায়ও ঘটেছে একই ঘটনা।
দীর্ঘ দুই দশক পর হওয়া চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে স্থান পেয়েছেন ২০ জন নেতা। এর মধ্যে সাতজন ছাড়া আর বাকি ১২ জনই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উপমন্ত্রী নওফেলের অনুসারী। কমিটিতে স্থান পাওয়া ১১ সহ-সভাপতির মধ্যে মাত্র তিনজন আ জ ম নাছিরের অনুসারী। এরা হলেন— হেলাল উদ্দিন, সুজিত দাশ, আবদুর রশিদ লোকমান। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে স্থান পাওয়া তিনজনের মধ্যে নাছির অনুসারী মাত্র একজন। তিনি আব্দুল্লাহ্ আল মামুন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে স্থান পাওয়া তিনজনের মধ্যে নাছির অনুসারী অবশ্য দুজন। তারা হলেন— মাছুদ খান ও সালাহ উদ্দীন শেরশাহ।
অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২০ সদস্যের কমিটিতে সর্বোচ্চ দুটি পদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৩টি পদই পেয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের অনুসারীরা।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের গত নির্বাচনে কাউন্সিলর মনোনয়ন নিয়ে আ জ ম নাছির ও নওফেল গ্রুপের স্নায়ুযুদ্ধ প্রথমবারের মতো প্রকাশ্য রূপ নেয়। একই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ নগর আওয়ামী লীগের ইউনিট সম্মেলন চলাকালে দুই গ্রুপের অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখা গেছে স্পষ্টভাবে।
গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই মহিউদ্দিন চৌধুরী পুত্র মহিবুল হাসান নওফেলকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা অনেকটা গোপনে বৈঠকে বসেন নগরীর এক বাসায়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ ডলফিনের চট্টগ্রাম নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারের বাসায় প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপি এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে। ওই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, কোষাধ্যক্ষ ও সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এবং বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী। ওই বৈঠকের কথা জানাজানি হতেই নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের অনুসারীরা একে ‘ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠক’ দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়ে ওঠেন। তাদের কেউ কেউ খোরশেদ আলম সুজনকে ‘রাজ্জাকি বাকশালী’ বলে অভিহিত করে আবদুচ ছালামকেও ‘সুবিধাবাদী’ বলে ক্ষোভ ঝাড়েন। তাদের কেউ কেউ মনে করছেন, মূলত আ জ ম নাছিরকে ঠেকানোর অংশ হিসেবেই তারা দফায় দফায় গোপন বৈঠকে বসছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে গিয়ে মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন।
ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের প্রায় ১০০টি ইউনিটের সম্মেলন হয়েছে। কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় ইউনিটেই আবার আ জ ম নাছির অনুসারীরা একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রেখেছে। এখন পর্যন্ত এটাই নাছির বলয়ের অর্জন। যদিও মহিউদ্দিন অনুসারীরা এসব সম্মেলন একতরফাভাবে করা হয়েছে— এমন অভিযোগ এনে কেন্দ্রের কাছে নালিশও তুলতে দেরি করেনি।
সেই নালিশের জের ধরে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি ঢাকার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা চট্টগ্রামের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায়ও বসেন। নানা সমীকরণের পর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের পাঁচ বছর আগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি এখন আগামী মার্চকে সামনে রেখে সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেখানেই মূলত দুই গ্রুপের লড়াইয়ের চূড়ান্ত রূপটি দেখা যাবে— আভাস দিচ্ছেন শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ।
Leave a Reply