সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি;-
বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ১ নং শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ পালন করেছে, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন পালিত হয়েছে এ সময় উপস্থিত ছিলেন তাহিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা তোফাজ্জল হোসেন ও শান্ত দাশ । উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতা, মোহাম্মদ উজ্জ্বল হাসান, মোহাম্মদ সাগর খাঁন, হৃদয়, খোকন মিয়া,পাবেল মিয়া,বিপল্ব পাল, দিপু, জুয়েল পাল, জাকারিয়া,
তাহিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা তোফাজ্জল হোসেন বলেন;-
মার্চ মাসটি বাঙালি জাতির জীবনে এক বিশেষ গুরুত্ববহন করে। এই মাসে বজ্রকন্ঠে বাঙালির স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন যে মহান মানুষটি, সেই ক্ষণজন্মা পুরুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বর্তমানে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেন বাঙালির মুক্তির মহানায়ক শেখ মুজিব।
তিনি আরো বলেন,
তুমার হাত ধরেই বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ। ২০২০ সালে তার জন্মের শতবছর পূর্ণ হয়। এ বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালে তার ১০২তম জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি, পাশাপাশি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীও উদযাপন করছে জাতি। তাই বছরটি আমাদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব নিয়ে হাজির হয়েছে।
৭ মার্চ জনসমুদ্রে ‘যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা’ করার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু। এরপর ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়ার ঠিক আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
২৫ মার্চের রাতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা নিয়ে সাংবাদিক ডেভিড লোশাক, দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায় লিখেন, ‘অন্ধকার নেমে আসার কিছুক্ষণ পর, সরকারি মালিকানাধীন পাকিস্তান রেডিওর তরঙ্গের কাছাকাছি একটি তরঙ্গের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষীণ কণ্ঠস্বর ভেসে আসে। শেখ মুজিবুর পূর্ব বাংলাকে গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ বলে ঘোষণা করেছেন। তার বাণী নিশ্চয়ই ইতিপূর্বে রেকর্ড করা হয়েছিল এবং তার কণ্ঠস্বর শুনে তাই মনে হয়েছে।’
(তথ্যসূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র: তৃতীয় খণ্ড, লিপিবদ্ধ)
বঙ্গবন্ধু পৃথিবীর নির্যাতিত মানুষের নেতা, বিশ্বনেতা। তার শততম জন্মবার্ষিকী মানে বাঙালির জন্য গর্ব ও সম্মানের। শতবর্ষের আয়োজনে জাতির পিতার জন্মবছর উদযাপনে জাতীয়ভাবে বছরজুড়ে বর্ণাঢ্য কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও নেওয়া হয় নানা উদ্যোগ। তবে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে কর্মসূচি সীমিত করা হয়। এ অবস্থায় ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুজিববর্ষ বৃদ্ধি করেছে সরকার।
গরীব-দুঃখী মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও তাদের দুঃখ দূর করার প্রতিজ্ঞা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানসিকতা তাকে রাজনীতিতে নিয়ে আসে। স্কুল থেকেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। গ্রামের স্কুলে তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি। ১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।
১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানেই ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৪১ সালে অসুস্থ শরীর নিয়েই ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন। ছাত্রজীবনেই মানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করেন তিনি। আর এভাবেই সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে যান রাজনীতিতে।
রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে তার পিতা তাকে বাধা দেননি, যাঘ নিজেই লিখেছেন তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে। বাবা লূৎফর রহমানের কথা উল্লেখ করে অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘বাবা রাজনীতি কর আপত্তি করব না, পাকিস্তানের জন্য সংগ্রাম করছ এতো সুখের কথা, তবে লেখাপড়া করতে ভুলিও না। লেখাপড়া না শিখলে মানুষ হতে পারবে না। আর একটা কথা মনে রেখ, ‘sincerity of purpose and honesty of purpose’ থাকলে জীবনে পরাজিত হবা না। একথা কোনোদিন আমি ভুলি নাই।’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পৃষ্ঠা-২১)
ম্যাট্রিক পাসের পর কিশোর মুজিব ভর্তি হন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে। সেখানকার ছাত্র থাকা অবস্থায় তার রাজনৈতিক জীবনের বড় পরিবর্তনগুলো শুরু হয়। তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয় হন এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিমের মতো নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর শেখ মুজিব ঢাকায় চলে আসেন। নতুন রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা নিয়ে ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ গঠন করেন। ১৯৪৯ সালে নবগঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে গড়ে ওঠা আন্দোলনে অংশ নেন। এর মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ এর মহান ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৮ এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন ও ১৯৬৬ এর ঐতিহাসিক ছয় দফা ভিত্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা।
১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ছাত্র জনতা তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালিরা বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তার ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার ডাক দেন। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী পরিকল্পিত গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
Leave a Reply