পঙ্কজ মিত্র,মঠবাড়িয়া(পিরোজপুর)প্রতিনিধি:-
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার একটি নিভৃত এলাকা ভীমনলী গ্রামে গড়ে উঠছে শহীদ স্মরণে স্মৃতির মিনার। ১৯৭১ সালের ২২ মে সংঘটিত গ্রাম বাসির প্রতিরোধ যুদ্ধে ১৫ শহীদের গণ সমাধিস্থলে দৃষ্টি নন্দন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। ১৫ জন শহীদের গণ সমাধিস্থল স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অযত্ন অবহেলায় পড়ে ছিলো।
মঠবাড়িয়া উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দুরে সাপলেজা ইউনিয়েনের ভীমললী গ্রামের শহীদের গণ সমাধিস্থলে ১০ শতক জমির ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে শহীদ স্মৃতি মিনার। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা বিরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস স্মৃতির মিনারের জন্য এ জমি দান করেন। এখানে গত দেড় বছর ধরে নির্মাণাধিন শহীদ স্মৃতির মিনারের নির্মাণ কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে।
প্রথম দফায় ৬২ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর আরো ৮ লাখ টাকা মোট ৭০ লাখ টাকা ব্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় এ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়। মেসার্স রাজ এ- ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্মৃতির মিনারটি নির্মাণ কাজ করছেন।
স্থানীয়রা জানান, মঠবাড়িয়ার সাপলেজা ইউনিয়নের হিন্দু অুধ্যষিত নলীভীম গ্রামের নলী খালের পাড়ে ওয়াপদা বেড়ি বাঁধ লাগোয়া ৮০টি হিন্দু পরিবরের বসবাস। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সেখানে যাতায়াত গড়ে ওঠে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিতাড়িত হিন্দু বাঙালীরাও সেখানে প্রাণ ভয়ে আশ্রয় নেয়। এ কারনে স্থানীয় স্বাধীনতা বিরোধি রাজাকারদের কাছে গ্রামটি টার্গেটে পরিনত হয়।
১৯৭১ সালে সাবেক জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের নেতৃত্বে মঠবাড়িয়া অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল বিশাল এক রাজাকার বাহিনী। তারা এলাকায় হিন্দুদের ঘর বাড়ি লুটতরাজ, গণ হত্যা ও নারী নির্যাতন চালায়।
রাজাকারকারা পরিকল্পিতভাবে ১৯৭১ সালের মে মাসে হিন্দু অধ্যু্িযষত এ গ্রামটিতে তা-ব চালিয়ে লুটপাট চালায়। মুক্তিযোদ্ধারও সেদিন রাজাকারদের পাল্টা আক্রমন করে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। সেদিনের সেই সম্মূখ যুদ্ধে রাজাকার লালু খাঁ মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হন। আর রাজাকারদের গুলিতে শহীদ হন ১৫ জন মুক্তিকামী বীর বাঙালী।
এ ব্যাপারে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, ভীমনলীর প্রতিরোধ যুদ্ধে ১৫ জন সেদিন শহীদ হন। সেই গণ সমাধিস্থলে বর্তমান সরকারের শহীদ স্মৃতির মিনার নির্মাণে আমরা অত্যন্ত খুশী।
প্রকল্পের সাইট ঠিকাদার মো. ইউনুস ফকির জানান, ১০ শতক জমিতে নির্মাণাধিন প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হতে আরো দুই মাস সময় লাগবে। তবে স্মৃতি স্তম্ভে যাতায়াতের রাস্ত নির্মাণে আরো তিন শতক জমি প্রয়োজন। যা সরকারের অধিগ্রহণ ছাড়া সম্ভব হচ্ছেনা। এর সঙ্গে স্থাপনার আশপাশ জুড়ে ওয়েটিং শেড, সুপেয় পানি, সোলার প্যানেল ও ওয়াশরুম নির্মাণ জরুরী। এসব বাস্তবায়নে আরও অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন।
এ স্মৃতির মিনারের সম্মূখ জমির মালিক দিলীপ কুমার বিশ্বাস বলেন, সড়ক ও অন্যান্য স্থাপনার জন্য আমি জমি দিতে ইচ্ছুক। জমির মূল্য পেলে জমি দিতে প্রস্তুত।
মঠবাড়িয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. বাচ্চু মিয়া আকন বলেন, মুক্তিযুদ্ধে মঠবাড়িয়ায় স্বাধীনতা বিরোধিদের সাথে যতগুলো সম্মূখ যুদ্ধ হয়েছে তার মধ্যে ভীমনলী গ্রামের বাড়ই বাড়ির সম্মূখ যুদ্ধ অন্যতম। শহীদের গণ সমাধিস্থলে গড়ে তোলা দৃষ্টিনন্দন স্মৃতির মিনার নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করবে।
Leave a Reply