স্টাফ রিপোর্টার;-
একসঙ্গে ১৪শ’র বেশি ইউনিট কমিটি করে নজির গড়েছে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকায় এই কমিটিগুলো গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। একসঙ্গে এতসংখ্যক কমিটি গঠনের নজির আওয়ামী লীগের ইতিহাসে আর নেই।
আওয়ামী লীগ টানা দুইবার ক্ষমতায় এলেও সাংগঠনিকভাবে তেমন একটা শক্তিশালী ভিত ছিল না নগর রাজনীতির। ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হন জামালপুর-৩ আসনের এমপি, যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম।
‘সাংগঠনিক ম্যানেজার’ খ্যাত মির্জা আজমকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা বিভাগের দলীয় রাজনীতি দেখভালের। সাংগঠনিক ঢাকার দায়িত্ব পেয়েই দল গোছাতে প্রথমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেন মির্জা আজম।উদ্যোগ নেন অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের। এরপর প্রথমেই ইউনিট কমিটি গঠনে হাত দেন তিনি। পাশাপাশি সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহও শুরু করেন।
কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগের এ সাংগঠনিক সম্পাদক মনে করেন, এই ইউনিট কমিটির নেতারাই ‘ভোট ব্যাংক’। ভোটের সময় এই কেন্দ্রভিত্তিক কমিটিই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে মির্জা আজম ২০২১ সালের জুনে শুরু করেন ঢাকা মহানগর ইউনিট কমিটি গঠনের কাজ। আর চলতি বছরের মার্চ মাসে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক টিম গঠনের কাজ শেষ করেন।
গত ২৯ মার্চ এক পরিচিতি সভার আয়োজন করা হয়। এতে দেখা যায় ৮০২টি ইউনিট কমিটি গঠন করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও বসে নেই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মির্জা আজমের সাংগঠনিক দক্ষতা ও নিদের্শনায় এখন পর্যন্ত ৬০০ ইউনিট কমিটি গঠন করেছে সংগঠনটি। অর্থাৎ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মিলে এরই মধ্যে ১৪০২টি ইউনিট কমিটি গঠন হয়েছে মির্জা আজমের নেতৃত্বে।
আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, এর আগে কখনো ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগে এভাবে ইউনিট কমিটি গঠন হয়নি। মির্জা আজমের নেতৃত্বের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে বলে জানাচ্ছেন ঢাকা নগর আওয়ামী লীগ নেতারা।
মাঠের রাজনীতি থেকে উঠে আসা মির্জা আজমকে জাতীয় রাজনীতিতে উঠিয়ে আনা হয় যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক করে। দ্রুতই সারা দেশের যুবলীগ নেতা-কর্মীদের মন জয় করে সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দিতে থাকেন।
২০০১ পরবর্তী সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নানক-আজম নেতৃত্বাধীন যুবলীগ রীতিমতো আন্দোলনের সমার্থক হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক মহলের সবারই জানা, নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলার একটিতে রীতিমতো কোমর সোজা করে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এজেন্ট, সমর্থক আর ভোটারদের। কিন্তু এখানেও সাংগঠনিক ক্যারিশমা দেখান মির্জা আজম।
কর্মীবান্ধব মির্জা আজমের জয়ের ম্যাজিক কী ছিল? এই প্রশ্নে সব সময় তাঁর উত্তর, ‘মানুষের ভালোবাসা।’ টানা ছয়বারের এমপি মির্জা আজম ২০০৯ সালে জাতীয় সংসদে হুইপ (প্রতিমন্ত্রী) ও পরবর্তীকালে ২০১৪ সালের মন্ত্রিসভায় পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সততা, দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব সামলেছেন। মিষ্টভাষী হিসেবে সব মহলে পরিচিতি রয়েছে তাঁর।
মির্জা আজমের গোটা রাজনৈতিক জীবনের প্রতিনিয়ত আচরণে মুগ্ধ রাজনৈতিক কর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশাজীবী মহল। এমনটাই সব সময় হয়ে এসেছে। সাহসী এবং দলের প্রয়োজনে যেকোনো ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে তিনি যে সিদ্ধহস্ত এর প্রমাণও মিলেছে বারবার।
মির্জা আজম মানেই কি ক্রাউড পুলার? এমন প্রশ্ন ছিল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের কাছে। তাঁদের অকপট স্বীকারোক্তি, নেতা-কর্মী আর সাধারণ জনতাকে যেভাবে আগলে রাখেন মির্জা আজম, তাতে জনতা যে তাঁকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করবে তাতে আর বিস্ময়ের কী আছে!
সদ্যশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনেও তিনি জাহাঙ্গীর কবির নানককে সঙ্গে নিয়ে দক্ষতার সঙ্গে পুরোমাত্রায় সাংগঠনিক মেধাকে কাজে লাগিয়েছেন। দলীয় সভানেত্রীর দেওয়া অ্যাসাইনমেন্ট নিখুঁতভাবে পালন করে মির্জা আজম দলের ভেতর আবারও নিজের দক্ষতাকে আরও একবার প্রমাণ করলেন।
Leave a Reply