কয়রা খুলনা প্রতিনিধি ঃ
আমার টাকায় আমার সেতু, বাংলাদেশের পদ্মা সেতু।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে ২৫ জুন উদ্বোধন হলো বাঙালী জাতির স্বপ্নের পদ্মা সেতু। খুলে গেল সক্ষমতার প্রতীক অদম্য বাঙালির এক নতুনতম অধ্যায়। পদ্মা সেতু একটি স্বপ্ন, একটি স্বাধীন দেশের স্বনির্ভরতা ও সক্ষমতার চ্যালেঞ্জ। পদ্মা সেতু বাঙালি জাতির গৌরবের প্রতীক। দ্রুত গতিতে অর্থনীতির ভীত শক্তিশালী করতে যেমন ভূমিকা রাখবে তেমনি দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি ও লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরীতে সমান ভূমিকা রাখবে। সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন কেন্দ্র নদীর তীরে গড়ে ওঠা বিসিক শিল্প নগরসহ দক্ষিণাঞ্চলের সকল পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। একইসাথে বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও শিক্ষান্নোয়নের প্রতীক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদ, খুলনা জেলা শাখার সহসভাপতি ও শিক্ষক অরবিন্দ কুমার মণ্ডল।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পরে আরেকটি বিজয়োৎসব পালন করলো বাঙালি জাতি। স্বাধীনতা অর্জনের পরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টের ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের, ৭২ ফুটের চার লেন বিশিষ্ট সড়কের দীর্ঘতম এই পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু ছিল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের তথা বাঙালি জাতির স্বপ্ন। পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের আগে দক্ষিনাঞ্চলের সাথে রাজধানীসহ অন্য অঞ্চলের যোগাযোগের প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল প্রমত্তা এ নদী। এই প্রতিবন্ধকতার কারণেই এই দক্ষিনাঞ্চলের মানুষ আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা ও যোগাযোগসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে পশ্চাৎপদ ছিল। যে কারণে রাজধানীসহ অন্য অঞ্চলের সাথে উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিপুল ব্যবধান যেমন তৈরি হয়েছে তেমনি আঞ্চলিক বৈষম্য ছিল প্রকট।
তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এবং দেশের প্রতিটি মানুষকে সমানভাবে ভালবাসেন। তিনি যেমন দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন চান তেমনি পূর্ব ও উত্তর অঞ্চলেরও একই মাত্রার উন্নয়ন চান। তাইতো তিনি পায়রা বন্দর চালু করেছেন। এখন স্বপ্নের পদ্মা সেতুও উদ্বোধন করলেন। তিনি বাংলাদেশের সমস্ত অঞ্চলের সমস্ত মানুষের একযোগে সুষম উন্নয়ন চান। প্রধানমন্ত্রী নিজেও দক্ষিনাঞ্চলে বেড়ে উঠেছেন। তিনিও তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধুর মতো এ অঞ্চলের মানুষের দুঃখ-দূর্দশা ও কষ্টের বিষয়ে অবগত আছেন। তাই একটি বিশাল অঞ্চলকে অবহেলিত রেখে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। সেই চিন্তা থেকে তিনি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য পদ্মা সেতুর কার্যক্রম শুরু করেন। তখন অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকাসহ দাতাসংস্থাগুলো পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের রাজি হয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে চুক্তি করলেও স্বাধীনতা বিরোধী একটি চক্রের ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণ চুক্তি বাতিল করে। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণে সংকল্প ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, নিজেদের শক্তি, সক্ষমতা ও ভূগোল নিজেদের মতো করে ব্যবহার করার প্রয়োজনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে এ বহুমুখী সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে। দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশকে বাকি অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করা এবং এরমধ্য দিয়ে দেশের এতদিনকার অভ্যন্তরীণ দূরত্ব লাঘব হবে। ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, উন্নয়ন, কর্মসংস্থান তথা সব খাতে প্রভূত অগ্রগতি সঞ্চার হবে। দেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদীর ওপর নিজস্ব অর্থায়নে বিশালাকৃতির সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে এটি বাংলাদেশের জাতীয় আকাঙ্খা, প্রতীক ও চেতনায় পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, হেনরী কিসিঞ্জারের তলা বিহীন ঝুড়ি থেকে কিভাবে একটি উন্নত জাতিতে পরিনত হলো তা এখন সারা বিশ্বের কাছে বিস্ময়। আর এসব সম্ভব হয়েছে বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ভবিষ্যৎ দেখতে পেতেন। সেভাবে তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বাঙালি জাতির ভবিষ্যৎ দেখতে পান। ভবিষ্যতে এ জাতি কোথায় যাবে তা তিনি অনুধাবন করতে পারেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও এই স্বপ্নই দেখেছিলেন। আমরা যেন আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করি। নিজেদের সম্পদ ও সামর্থ্য দিয়ে নিজেদের ভাগ্যোন্নয় করতে পারি।
পদ্মা সেতু ২৫ জুন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে স্বপ্ন বাস্তবে রুপ দিতে চলেছে। এতে করে ব্যাবসা বাণিজ্যের প্রসারের ফলে খুলনার করাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়ন হবে। পাল্টে যাবে পূরানো চেহারাও। ছাত্ররা এ অঞ্চলে এসে তাদের মেধা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে গবেষণায় আরো বেশি অবদান রাখবে। আমাদের দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দ্বার উন্মোচিত হবে এ বিশ্বাস সকলের।
Leave a Reply