মঠবাড়িয়া(পিরোজপুর) প্রতিনিধিঃ-
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়াসহ উপকূলীয় অঞ্চলে উৎপাদিত সুপারি দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারতেও রপ্তানি করা হচ্ছে। এখানকার সুপারি মানসম্পন্ন হওয়ায় দেশের গন্ডি পেরিয়ে ভারতেও এর চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ভারতের হুগলি জেলার চুঁচুড়া ও চন্দননগর এলাকায় মঠবাড়িয়া ও স্বরূপকাঠির সুপারির বেশ চাহিদা রয়েছে। তাই এখান থেকে শত শত মণ সুপারি ভারতে চালান দেওয়া হয়।
এ দুই উপজেলাকে একটি বাণিজ্যিক এলাকা বলা হয়। এখানকার উৎপাদিত পেয়ারা, আমড়া, লেবু, নারকেল, পান, সুপারিসহ নানা ধরনের পণ্যের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। এখানকার উৎপাদিত পণ্য দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে। বছরজুড়ে সুপারির ব্যবসা চলমান থাকলেও মূলত বছরের আশ্বিন ও কার্তিক মাস সুপারির ভরা মৌসুম। এ সময় উপজেলার সদর এবং ধানীসাফা, বড়মাছুয়া, তুষখালী, মিরুখালী, গুলিসাখালী, সাপলেজা, জগন্নাথকাঠি, ইদিলকাঠি, কুড়িয়ানা, সমুদয়কাঠি, করফা, কামারকাঠি, মাদ্রা, সোহাগদল, শশীদলসহ অন্তত ৩০ টি হাটে সুপারি বেচাকেনা হয়।
সরেজমিনে বিভিন্ন হাট-বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ৮ টার মধ্যেই হাট ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখরিত হয়ে যায়। বাজার গুলোতে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ২০ টি আড়ৎ রয়েছে। হাটে তিন ধরনের সুপারি আসে। এগুলো হলো কাঁচা-পাকা, শুকনো এবং খোসা ছাড়ানো। এর মধ্যে কাঁচা-পাকা সুপারি ‘কুড়ি’ হিসেবে বিক্রি করা হয়। ২১০টি সুপারিতে এক কুড়ি হয়, বর্তমান হাটে এর মূল্য ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এ ছাড়া শুকনা সুপারির প্রতিমণ ১৩ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা এবং খোসা ছাড়ানো সুপারি প্রতি মণ ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় আড়তদাররা এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা এক শ্রেণির বেপারী এখান থেকে সুপারি ক্রয় করে বস্তায় ভরে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, গৌরনদী, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়ে দেন। খুলনা ও বাগেরহাটসহ আশপাশের সীমান্তবর্তী অনেক ব্যবসায়ী এখান থেকে সুপারি ক্রয় করে ভারতের হুগলিসহ কয়েকটি এলাকায় চালান দেন।
উপজেলার প্রায় এক হাজার ব্যবসায়ী এবং আরো অন্তত ৯ হাজার নারী-পুরুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই ব্যবসায় জড়িত থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। এর মধ্যে আড়তে কর্মরত শ্রমিকের বেতন দিনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে বসে শত শত নারী সুপারির খোসা ছাড়ানোর কাজ করে থাকেন।
উপজেলার বড়মাছুয়া ইউনিয়ন ও ধানীসাফা বাজারের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিভিন্ন বাড়িতে নারীরা সুপারির খোসা ছাড়ানোর কাজ করছেন। স্থানীয়ভাবে কুড়ি হিসেবে এক হাজার সুপারির (১০ হাজার ৫০০) খোসা ছাড়িয়ে তারা ৪০০ টাকা পান।
মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঊর্মি ভৌমিক জানান, এই উপজেলায় সুপারি ব্যবসার সাথে বিভিন্নভাবে জড়িত থেকে কয়েক হাজার মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। পাশাপাশি এখানকার সুপারি ব্যবসা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
Leave a Reply