বরিশাল সংবাদদাতা:-
সম্প্রতি বরিশাল মহানগরে হেযবুত তওহীদের একটি কর্মী সমাবেশকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সেই সমাবেশকে বানচাল করার উদ্দেশ্যে চরমোনাইয়ের অনুসারীদের রাস্তায় নেমে আসা, প্রশাসনকে হুমকি-ধামকি, সহিংসতা সৃষ্টির পাঁয়তারা- এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। এদিকে হেযবুত তওহীদের সদস্যরা এই ঘটনার প্রতিবাদে রাজপথে শান্তিপূর্ণ মিছিল, মানববন্ধন কর্মসূচি ও সংবাদ সম্মেলন করেছে। তারা এই সহিংস পরিস্থিতির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছে।
জানা গেছে, গত ১৪ জানুয়ারি বরিশাল বিভাগের কমিটি গঠনের জন্য জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এক কর্মী সভার আয়োজন করে হেযবুত তওহীদ। এর প্রস্তুতি হিসেবে বরিশালের ডিসি, পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপারসহ সরকারের যাবতীয় দপ্তর থেকে লিখিত অনুমতি নেওয়া হয়। কিন্তু অনুষ্ঠানের দিন চরমোনাই ইসলামী আন্দোলনের নেতা মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব, ইসলামী আন্দোলন বরিশালের মুখপাত্র আব্দুল্লাহ্ আল মামুন টিটু, বরিশাল মহানগর সেক্রেটারী মুফতি সৈয়দ নাসির আহম্মেদ কাওসার, জয়েন্ট সেক্রেটারী মাওলানা মো. আবুল খায়ের এর নেতৃত্বে ২০-২৫ জন লোক গিয়ে থানা ঘেরাও করে। তারা উদ্ধতভাবে ও উচ্ছৃঙ্খলভাবে থানা অফিসারের রুমে গিয়ে হুমকি দিয়ে বলে এখানে হেযবুত তওহীদের অনুষ্ঠান করতে দেওয়া যাবে না। তারা প্রশাসনকে হুমকি দেয় যে, সম্মেলন হলে তারা সেখানে হামলা চালাবে। এদিকে সম্মেলনের দিন সকাল থেকেই তারা অনুষ্ঠানস্থলের আশেপাশে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান করে ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়। ফলে নগরীতে যানজট দেখা যায়। সংঘাতের আশঙ্কায় অনেকে দোকানের শাটার নামিয়ে দেয়। পুরো নগরী স্থবির হয়ে পড়ে।
থানা পুলিশের পক্ষ থেকে হেযবুত তওহীদের নেতাদের সেদিন সম্মেলন না করার অনুরোধ জানানো হয়। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তারা সম্মেলন স্থগিত রাখেন। তবে এই অন্যায়, জোরজবরদস্তিমূলক কার্যক্রমের প্রতিবাদের হেযবুত তওহীদের স্থানীয় নেতাকর্মীরা রাজপথে নেমে আসেন। তারা বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সম্মুখে একটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এসময় বক্তব্য রাখেন বরিশালের কৃতি সন্তান, হেযবুত তওহীদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদের বিভাগীয় আমির ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বর থেকে শুরু হয়ে বরিশাল সদর রোড প্রদক্ষিণ করে জেলখানা মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
এদিকে চরমোনাইয়ের অনুসারীরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তারা সেদিন সন্ধ্যার পর হেযবুত তওহীদের জেলা কার্যালয়ের সামনে লোক জড়ো করে অবস্থান নেয়। এছাড়াও মসজিদে মসজিদে মাইকে হামলা করার জন্য ঘোষণা দেয়। পরে এসব জায়গায় পুলিশের ব্যাপক সদস্য মোতায়েন করা হয় এবং পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করা হয়।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে জেলা হেযবুত তওহীদ। সংবাদ সম্মেলনে চরমোনাইয়ের উগ্রবাদী, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ও মদদদাতাদের আইনের আওতায় আনা, হেযবুত তওহীদের সদস্যদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কর্মী সম্মেলন বানচালের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়সহ হেযবুত তওহীদের পক্ষ থেকে ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়।
এ ব্যাপারে হেযবুত তওহীদের বরিশাল বিভাগীয় আমির মো. আল আমিন সবুজ বলেন, হেযবুত তওহীদ আন্দোলন বিগত প্রায় ২৮ বছর ধরে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উপায়ে দেশের আইন মান্য করে মানবতার কল্যাণে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা মানব সমাজে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আদর্শ প্রচার ও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আইন মান্য করি বলে এটা আমাদের দুর্বলতা নয়। প্রশাসনের নিষেধ উপেক্ষা করে আমরাও হলে আসতে পারতাম। কিন্তু এখানে রণক্ষেত্র হত। আমরা তা চাই না। বরিশাল তো আমাদেরও বাড়ি । আমাদেরও তো অধিকার আছে এখানে আন্দোলন করার, সংগঠন করার। বরিশাল তো শুধু চরমোনাইয়ের না, এটা হিন্দু বৌদ্ধ মুসলমান খ্রিষ্টান, সরকারি দল, বিরোধী দল, চরমোনাই, বিএনপি, জামাত, আওয়ামী লীগ সবার জন্য বরিশাল। এখানে সবার অধিকার রয়েছে। আমাদেরও অধিকার থাকবে। আমাদের কার্যক্রম করতে পারবো না, আমাদের সম্মেলনে হামলা করা হবে এটা তো হতে পারে না। আমরা আমাদের কার্যক্রমে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।
Leave a Reply