ইমাদুল ইসলাম, যশোর জেলা প্রতিনিধি;-
আমাকে সব কাজ সময় বেঁধে দিতো। সেই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে রুটি বানানো বেলুন, খুন্তি দিয়ে মারতো। মাঝে মধ্যে রেঞ্জ প্লাস দিয়ে পায়ের নোখ উঠায়ে দিত। এভাবেই আমাকে গত ৮ মাস ধরে নির্যাতন করা হয়েছে।’
গৃহকর্তা-গৃহকত্রী কাছে নির্যাতনের শিকার ১৩ বছর বয়সী শিশু গৃহকর্মী ফিহ্ ামনি বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই মধ্যযুগীয় নির্যাতনের বর্ণনা দেন। এরআগে পুলিশ বুধবার মধ্যরাতে জরুরি সেবা নাম্বার ৯৯৯- তে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শহরের ঘোপস্থ একটি বাসা থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এই ঘটনায় গৃহকর্তা সরকার শামীম আহমেদ অংকুর ও গৃহকত্রী জান্নাত জুঁইকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নির্যাতনের শিকার হওয়া শিশু ফিহা মনি দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার মাঝপাড়া এলাকার মৃত আবুল হোসেনের মেয়ে। সে যশোর শহরের ঘোপস্থ এলাকায় সরকার শামীম আহমেদ অংকুর নামে সিনজেনটা কিটনাশক কোম্পানির সেলস ইউনিট ম্যানেজারের বাড়িতে গৃহপরিচারিকা হিসাবে কাজ করতো।
পুলিশ সূত্র মতে, কয়েক বছর আগে ফিহা মনির বাবা মারা গেলে তার মা আবার অন্যজনকে বিয়ে করেন। তখন থেকে ফিহা মনি পার্শ্ববর্তী গ্রামে তার নানী বাড়িতে থাকতো। পরে তার মায়ের পরিচিত সরকার শামীম আহমেদের বাড়িতে গৃহপরিচালিকার কাজ করতে দিয়ে দেন। ৯ মাস আগে ফিহা মনিকে শামীম আহমেদ যশোরে ভাড়ার বাড়িতে নিয়ে আসেন। যশোরে একমাস তারা ফিহার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলেও পরবর্তী ৮ মাস নির্যাতন করে আসতো বলে পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের ভাষ্য।
সরেজমিনে দুপুরে হাসপাতালে যেয়ে দেখা যায়, ‘একটি ছেঁড়া রঙচোটা ফ্রগ পরে হাসপাতালের বেডে ভাত খাচ্ছেন। শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতস্থান। পায়ে আঘাত করার কারণে দুই পা ভাজ করতে পারছে না। দুই পা মেলিয়েই ভাত খেতে দেখা যায়। পাশের বেডেই এক রোগীর স্বজন বলেন, এই শিশুটির নির্যাতনের ক্ষত দেখে শিউরে উঠি। সকালে কিছু খায়নি। এর সাথে কোন স্বজনরা না থাকায় আমাদের বাড়ি থেকে আনা খাবার দিয়েছি; সেগুলোই খাচ্ছে। খাওয়া শেষ হলে তারা ৮ মাস ধরে নির্যাতন করে আসছেন বলে অভিযোগ করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফিহা মনি বলেন ‘আমাকে সময় বেঁধে গৃহস্থালির সব কাজ করতো হতো। কাপড় ধোয়া, ঘর মোছা, থালা বাসন পরিস্কার, মসলা বাটাসহ সব কাজ করতো হতো। কোনো কাজে একটু বেশি সময় লাগলে রুটি বানানো ব্যালন, ডিসের মোটা তার ও সেলাই রেঞ্জ নিয়ে মারতো গৃহকত্রী জান্নাত জুঁই ও তার স্বামী। বুধবার সন্ধ্যায় ছাঁদ থেকে কাপড় তুলে আনতে একটু দেরি হওয়ায় ব্যালন দিয়ে বেদম পিটুনি দেওয়া হয়। চোখে রক্ত জমে যায়। সেলাই রেঞ্জ দিয়ে পায়ের নক থেতলে দেয়। চিৎকার করলে মেরে ফেলার ভয় দেয়। ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারি না। রাতে দরজা খোলার সময় পাশের বাড়ির একজন আমাকে দেখে ঘটনাচিৎকার করলে মেরে ফেলার ভয় দেয়। ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারি না। রাতে দরজা খোলার সময় পাশের বাড়ির একজন আমাকে দেখে ঘটনা জানতে চাইলে। আমি বলে দিই আমাকে মেরেছে। পরে রাতে পুলিশ এসে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।’
যশোর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, শিশুটিকে রাত ১ টা ১০ মিনিটে ভর্তি করা হয়। তিনি জানান, ‘শিশুটিকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ভোতা অস্ত্র দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। চোখে, মাথা, পায়ের তলাতে আঘাত পেয়েছে। প্রথমে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হলেও তিনি এখন শঙ্কামুক্ত।
যশোরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, ‘গভীর রাতে ৯৯৯ আমাদের কাছে ফোন আসে এক গৃহকর্মী শিশুকে নির্যাতন করা হচ্ছে। কল পাওয়া পরেই ঘটনাস্থলে যেয়ে ঘটনার সত্যতা পায় পুলিশ। পরে শিশুটিকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ও অভিযুক্ত গৃহকত্রী ও গৃহকর্তাকে আটক করা হয়েছে। এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। তিনি জানান, বাসাবাড়িতে নির্যাতনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা কিছু তার, বেলুন তার উদ্ধার করেছি।
Leave a Reply